উষালোকে—সম্পাদক: মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ \ জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০০৯ \ প্রচ্ছদ: আনোয়ার ফারুক \ ২২৬ পৃষ্ঠা \ ১৫০ টাকা
অভিজাত সাহিত্য পত্রিকা উষালোকের নবম পর্যায় পঞ্চম সংখ্যা বেরিয়েছে সম্প্রতি। আবু ইসহাকের উপন্যাস পদ্মার পলিদ্বীপ নিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন রয়েছে এ সংখ্যায়। আবু ইসহাক বলতেই সূর্য-দীঘল বাড়ি বুঝি, কিন্তু পদ্মার পলিদ্বীপও যে আবু ইসহাকের পরিচয় বহন করতে পারে, কিংবা সমগ্র বাংলাসাহিত্যের প্রেক্ষাপটেই এর মর্যাদা নিয়ে কথা তোলা যেতে পারে, ঊষালোকের সম্পাদক মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ সেই পথটিই দেখিয়ে দিলেন।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অগ্রজ কথাসাহিত্যিকের সৃষ্টির মূল্যায়ন করলেন, এটি বড় দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। তাঁর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও যুক্তিগ্রাহ্য। ‘শেষকথা’ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘উপন্যাসটি শিল্পিত করার নানা উপাদান থাকলেও পাঠ শেষে মনে হয়, যে শিল্পসৌন্দর্য সাহিত্যে নান্দনিক উত্কর্ষ আনে, সে জায়গাটি ছুঁতে পারেনি লেখক’। ‘নান্দনিক উত্কর্ষ’হীন এই উপন্যাসটি নিয়ে সেলিনা হোসেনের আলোচনাটিও বেশ মনোজ্ঞ হয়ে উঠেছে। শান্তনু কায়সার কেবল দেশজ পটভূমিতে নয়, বিশ্ব পটভূমিতে স্থাপন করেও এই উপন্যাসের আলোচনা করেছেন। ভীষ্মদেব চৌধুরী এই উপন্যাসে খুঁজে পেয়েছেন ‘লোক-জীবনযাত্রার অবিমিশ্র শুদ্ধতা’। নিম্নবর্গের জীবন চিত্রায়িত হওয়ায় এর স্বতন্ত্র মাত্রা নির্দেশ করেছেন বিশ্বজিত্ ঘোষ। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে হরিপদ দত্ত দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্বন্দ্বের স্বরূপ উন্মোচনের ঐতিহাসিক দায়-দায়িত্ব বহন করার জন্য উপন্যাসটি আমাদের ‘সাহিত্য ঐতিহ্যেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’ হয়ে উঠেছে। তবে এর শৈল্পিক দুর্বলতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। আহমাদ মাযহার এই উপন্যাসে জীবনবাস্তবতা ও ব্যক্তির সংকট খুঁজেছেন। সরকার আবদুল মান্নান খুঁজেছেন লোকজ জীবনের মহাভাষ্য। শহীদ ইকবালের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ: বিষয় ও বিন্যাসে’ প্রবন্ধটি মনে হচ্ছে বছর চারেক আগে সৈয়দ আকরম হোসেন সম্পাদিত উলুখাগড়ায় ছাপা হয়েছিল একই শিরোনামে। মাসুদ রহমানের প্রবন্ধে এই উপন্যাসে বর্ণিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। শামিমা নাসরিনের আলোচনার বিষয় ‘আঞ্চলিক উপভাষার প্রয়োগ’। আঞ্চলিক ভাষা কি কখনো মানভাষা হয়? তাহলে ‘আঞ্চলিক উপভাষা’ বলতে প্রবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? কিংবা ‘উপভাষা’ কি কখনো জাতীয় ভাষা হয়?
পদ্মার পলিদ্বীপ-এর পাঠপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রেরিত সুবোধ সেনগুপ্তের চিঠিটি বেশ চমত্কার। আবদুল হকের দিনপঞ্জিতে আবু ইসহাক প্রসঙ্গটুকু আহমাদ মাযহারের গ্রন্থনায় মুদ্রিত হয়েছে। এই আয়োজনটি অভিনব বলেই আকর্ষণীয়। আবদুল হকের জীবন ও কর্মের খতিয়ানও তুলে ধরেছেন আহমাদ মাযহার। এই রকম বহুকৌণিক প্রেক্ষাপটে পদ্মার পলিদ্বীপ উপন্যাসের বিচার ও তাঁর স্রষ্টার কৃতিত্বকে স্মরণ করার সুযোগ করে দিয়ে মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ সকল মহলের ধন্যবাদ পাবেন। আগের সংখ্যাগুলোর মতো এই সংখ্যাও পাঠকপ্রিয়তা পাবে, সে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
২২৬ পৃষ্ঠার এই পত্রিকার দাম দেড় শ টাকা মাত্র।
তপন বাগচী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৬, ২০০৯
Leave a Reply